পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

তফাৎ

বর্ধমান লোকাল থেকে লাফ দিয়ে নেমে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে দৌড়তেই অমিয় দেখে ট্রেনের শেষটুকু প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে 'ধুস শালা' - বলে একটা শ্বাস ছাড়ে অমিয় ছেলের জ্বর হয়েছে বলে অফিস থেকে একটু আগে বেরিয়েছিল আজ কিন্তু এই বর্ধমান লোকালটা এমন লেট করে ব্যাণ্ডেলে ঢোকে যে নৈহাটি যাওয়ার ট্রেনটা প্রতিদিন বেরিয়ে যায় এরপরের ট্রেনের জন্য আবার চল্লিশ মিনিট বসে থাকো মনে মনে বিরক্ত হয়ে ওঠে অমিয় ছেলেটা কেমন আছে জানতে বাড়িতে ফোন করে সে চারিদিকে হকারের চেঁচামেচি, অন্যসব ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট, প্যাসেঞ্জারের হৈ-হট্টগোলে চারিদিক মাতোয়ারা। অমিয়র মতো এই লাইনের ডেলি প্যাসেঞ্জারেরা মনে করে রেলের এসব ঠিক করা থাকে। একটা ট্রেন এরকম লেট করে ঢুকলে প্যাসেঞ্জারগুলো বেশ কিছুক্ষণ স্টেশনে বসে থাকবে। হকারদের থেকে কিছু কিনে খাবে সে চা-ই হোক কিংবা ফলপাকড়। তাতে হকারদের লাভ বাড়বে। তাই তারা ইচ্ছা করে লেটে ট্রেন ঢোকায়। আর এ নিয়ে হকারদের সাথে রেলের লোকেদের দীর্ঘদিনের গাঁটছড়া বাঁধা আছে। অন্তত অমিয় তাই মনে করে। সত্যি কি বিজনেস। বাড়ি থেকে খবর আসে তার ছেলে পিন্টুর সকাল থেকে একবারই জ্বর এসেছে। এখন সে ঘুমোচ্ছে। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অমিয়। যাক জ্বরটা তাও বাড়েনি। তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছে ছেলেটা। বাড়িতে গিয়েই ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে। আজ ডাক্তার না পাওয়া গেলে কাল দরকার হলে অফিসে ছুটি নিতে হবে। কথাগুলো মনে মনে বলতে বলতে অমিয় সামনের বেঞ্চিটাতে বসে। ব্যাগ থেকে আনন্দবাজার বের করে হেডলাইনসগুলোর ওপর দিয়ে চোখ বোলাতে থাকে। কাগজে বেশ মগ্ন হয়ে গেছিল সে। জয় কালিয়ার বিখ্যাত মাছরাঙা এয়ারলাইনস ঋণের দায়ে বন্ধ হয়ে গেছে, নরোত্তমকে ২০১৪র ভোটে প্রধানমন্ত্রী করা হবে কি না সে নিয়ে জলঘোলা চলছে, শচীন্দ্রনাথ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন কি না কেউ বুঝতে পারছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎই কাগজে একটা টোকা। ওপর থেকে পাখিতে ইয়ে করল কিনা দেখতে গিয়ে মুখ তোলে অমিয়। তাকাতেই দেখে তার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ক্লাস টেনে ফেলে আসা ক্লাসমেট রাজেশ। বয়স একই হলেও চল্লিশের গোড়ায় অমিয়র মতো রাজেশের মাথা জোড়া টাক নেই। আছে যেটা, ঘন কাঁচাপাকা চুল। ক্লিন শেভ করা চকচকে গোলগাল মুখ। কানে হেডফোন, হাতে মোবাইল। কি খবর? প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর বাদে দেখা, চিনতে পারিস? একই স্কুলে পড়লেও রাজেশের পূর্বসূরিরা সব বিহারের বাসিন্দা। তবে ওর জন্ম এখানেই। কিন্তু এখন আর এখানে থাকে না। উচ্চমাধ্যমিকের পরই বিজনেস করতে বন্ধুরা মিলে গুজরাটে পাড়ি দেয়। তারপর অনেকদিন রাজেশের সাথে অমিয়র যোগাযোগও ছিল। কিন্তু আজ রাজেশকে এভাবে এখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় সে। একগাল হেসে উল্লসিত হয়ে বলে, আরে রাজা যে! হঠাৎ এখানে? কি ব্যাপার? অমিয়কে শেষ করতে না দিয়েই রাজেশ ওকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি শুরু করে। রাজেশ বলে, এই তো। বাড়িয়ে এসেছিলাম। মা-বাবা রয়েছে তো এখানেই। ভাইয়েরা সব আছে। তোর খবর কি? অমিয় বলে, আমি তো এখন ইউকো ব্যাঙ্কে আছি। দেবীপুর ব্রাঞ্চে। তুই তো শুনলাম গুজরাটে গিয়েছিলি। বিজনেস কেমন চলছে? রাজেশ জানায়, চলছে সব ঠিকঠাক। ওখানেই তো আছি এখন। তারপর হিন্দুস্থান লিভারের একটা নতুন ডিলারশিপ নিয়েছি ওখানে। অমিয় মুচকি হেসে বলে, তোর বাংলা শুনলে মনে হবে না যে তুই বাঙালী নস। এতদিন পর এসেও সাচ্চা বাঙালীর মত কথা বলিস। রাজেশ মৃদু হেসে ছোট্ট করে বলে, ওটা এসে যায়। অমিয় জিজ্ঞেস করে, তারপর, তোর পারফিউমের বিজনেস কেমন চলছে? ওটার জন্যেই তো গুজরাটে গেছিলি। রাজেশ ক্যাজুয়ালি হেসে বলে, ওটা তো আছেই। তারপর কত কিছু হল। সাবানের বিজনেস খুললাম, সামনে একটা রঙয়ের বিজনেস খোলার ইচ্ছে আছে। তারপর স্টেশনটার দিকে একটু উঁকি মেরে বলে, চ, ট্রেন আসছে। অমিয় দেখে ট্রেনের আলো। স্টেশনের সামনেটায় লাইন দিয়ে লোকের ভিড়। বেশীরভাগই অফিসফেরৎ যাত্রী। ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে ঢুকতে একবার জোর গলায় ‘পঁ’ করে চীৎকার করে ওঠে।
ট্রেনে উঠে আরামসে বসারও সিট পেয়ে গেল ওরা। অমিয় বলে, তোর বাড়ির খবর কি? রাজেশ বলে, চলছে সব ঠিকঠাক। রাজেশও ওর বাড়ির খবর নেয়। তারপর কথায় কথায় অমিয় বলে, জানিস তো, তোকে দেখলেই আমার বিজনেস করার ইচ্ছাটা আবার জেগে ওঠে। ছোটবেলায় বড়ো সাধ ছিল, বুঝলি, একটা বিজনেস খুলব। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটটাকে উল্টে সে বলে, সে আর হল না। রাজেশ ফিক করে হেসে বলে, এখনও তো খুলতে পারিস। এর কি কোন বয়স আছে? অমিয় কথাটাকে ঝেড়ে ফেলে বলে, আরে ধুর! এখন এই সংসার আর চাকরির মধ্যে কি আর সেসব হয়? কিছুক্ষণ ওরা চুপচাপ। ট্রেন ছাড়বে ছাড়বে করছে। চারিদিকের ক্যাঁচরম্যাচর আওয়াজ, আর তখন থেকে কার মোবাইলে যেন হয়ে চলেছে, হাম তেরে বিন। গার্ডের হর্ন দেওয়ার আওয়াজ আসে। অমিয় বলে, তবে, তোর সাথে আরো ক’টা দিন কাটালে আমিও হয়তো তোর মতোই ব্যবসা-ট্যাবসা শুরু করে দিতাম। চাকরিতে হাজার হোক একটা একঘেয়েমি আছে। রাজেশ একটু বিজ্ঞের মত করে বলে, ব্যবসার আসল কথাটা কি জানিস? অমিয় নিরুত্তর। রাজেশ বলে, প্রফিট। আর প্রফিট বাড়াতে তোর মেন যে জিনিস দরকার তা হল অ্যাডভারটাইসমেন্ট আর ইনোভেশন। অমিয় বলে, আর কোয়ালিটি? রাজেশ চটজলদি বলে ওঠে, আরে রাখ তোর কোয়ালিটি। ওসব পরের কথা। আগে অ্যাড না দিলে লোকে তোর প্রোডাক্ট কিনবে কেন? অ্যাডটাই তোর প্রোডাক্ট আইডেন্টিটি। বুঝলি? অমিয় ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবে। পাশ দিয়ে একটা লজেন্সওয়ালা কড়কড়ে গলায় চেঁচাতে থাকে, ভাল লজেন্স আছে নিয়ে যান। বলতে বলতে সে অমিয়র সামনে লাল আর সবুজ রঙয়ের তিন-চারটে লজেন্স বাড়িয়ে ধরে। অমিয় মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই হকারটাকে দেখলেই অমিয়র বিরক্তি লাগে। ক’দিন আগেই এই লোকটা বলছিল ওর ছেলের নাকি খুব অসুখ। কিছু সাহায্য চাই। আর আজ দেখো। দেখে মনেই হচ্ছে না ওর মনে কোন দুশ্চিন্তা আছে। শালারা সব মিথ্যুক। অমিয় ভাবে, ঠিকই করেছিল সে ওকে সেদিন সাহায্য না করে। সে চলে যেতেই রাজেশ তার আগের কথার খেই ধরে বলে, তবে একটা ব্যাপার ঠিক। এক-একজনের অ্যাডভারটাইসমেন্ট করার স্টাইল এক এক রকমের। কেউ অ্যাড দেয় টিভিতে, কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায়, কেউ বা এই হকারের মত গলার ভয়েসে। কিন্তু সবারই একটাই কথা, প্রফিট। প্রফিট কমলেই তাই আমাদের মাথায় হাত। অমিয় বলে, হ্যাঁ, এই তো আজকের কাগজেই পড়লাম, জয় কালিয়ার এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। রাজেশ বলে, তাহলেই বোঝ। লোকটার মাথায় এখন কত চাপ। অমিয় বলে, এই মন্দাতেই তো কত কোম্পানি উঠে যাচ্ছে। রাজেশ বলে, সে তো হচ্ছেই। একটা কোম্পানি চালানো যেমন বিরাট ব্যাপার, তেমনি মার্কেটে লস খেলে মালিক একেবারে শেষ। তুই কি ভাবিস, এই অনিল-মুকেশ আম্বানিদেরও কি কম চাপ নাকি? একবার কোম্পানি পিছোতে শুরু করলেই হয়েছে। অমিয় বলে, হ্যাঁ, তখন সব দায় গিয়ে মালিকের ওপরেই পড়বে।
হঠাৎই হইহই চীৎকার। চেন টানলো যেন কেউ। অমিয় গল্পে মজে এতক্ষণ খেয়ালই করেনি কখন ব্যাণ্ডেল থেকে ট্রেন ছেড়ে দুটো স্টেশন পেরিয়ে এবার নৈহাটি ঢুকছে। কিন্তু এত হৈ-চৈ কিসের? নৈহাটি ঢুকতে তো অনেকটা বাকি। ট্রেনটা যেখানে দাঁড়িয়েছে তার দুদিকে বড় বড় দুটো বিল। অমিয় দেখে ট্রেন থেকে কেউ কেউ লাফ মেরে নেমে পড়ছে। কেউ দরজা দিয়ে, কেউ বা জানলা দিয়ে সামনের কামরার দিকে তাকাচ্ছে। কেউ বা আবার অমিয়র মতোই হতভম্ব। অমিয় উঠে দেখতে যায় কি হল। একজন জানায়, সামনের কামরা থেকে একজন হকার গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। অমিয় আশ্চর্য হয়ে বলে, কেন? লোকটা বলে, মনে হয় সুইসাইড করতে গেছিল। অমিয় পরে তার সহযাত্রীদের কাছ থেকে জানতে পারল, যে লজেন্সওয়ালা কিছুক্ষণ আগে তাদের সামনে বিক্রি করছিল, ঝাঁপটা সেই দিয়েছে। আসলে সেদিন ওর একটাও লজেন্স বিক্রি হয়নি। আগের দিনেও না। বাড়িতে তার ছেলের অসুখ। সংসার চালাবার সামর্থ্যও হয়তো তার আর নেই। অমিয়র মনে পড়ল, লোকটা তার কাছ থেকে সেদিন সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু মিথ্যে কথা ভেবে তার কথায় সেদিন কেউই তাকে পাত্তা দেয়নি। অমিয় ভাবে, তার নিজের ছেলেরও তো অসুখ। কেউ কেউ বলতে লাগল, আর ভেবে কি হবে বলুন? যা যুগ পড়েছে। সবাই হয়তো ভাবল, সত্যিই তো আর ভেবে কি হবে। তার থেকে নিজের কাজে মন দেওয়াই ভাল। কিন্তু আজ অমিয়র সেসব মনে হল না। বরং তার একটা আক্ষেপ হতে লাগল। মন বারবার বলতে লাগল, একবার দেখে আসে লোকটাকে। সে দৌড়ে যায় ট্রেনের দরজার কাছে। সামনের কামরার কাছে বেশ কিছু লোকের জটলা। জানা গেল, লোকটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে অমিয়র আর দেখা হল না। সে ভাবতে লাগল লোকটার কথা। চোখটা সরু হয়ে গেল তার। কোন এক অজানিত জীবনের হতভাগ্য ছবি সে দেখবার চেষ্টা করলো। কিন্তু সবটাই তার কাছে খুব অস্পষ্ট। রাজেশের গলার স্বরে তার সম্বিৎ ফেরে। রাজেশ ক্যাজুয়ালি একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, কি রে! কি ভাবছিস? আরে ও আদমি তো পাগল হ্যায়। ইতনা কিঁউ সোঁচতে হো? রাজেশের কথায় অবাক হয়ে যায় অমিয়। ভাষাটার মত রাজেশও যেন অমিয়র থেকে আলাদা হয়ে যায় মুহুর্তে।

পরের দিনের খবরের কাগজের পাতা ওল্টাতেই বেশ চমকপ্রদ একটা খবরে অমিয়র চোখ আটকে যায়। সামনের পাতায় বড় বড় হেডিংয়ে লেখা, জয় কালিয়া তিরুপতি মন্দিরে পাঁচ কেজি সোনা দান করেছে। পাশে জয় কালিয়ার হাসিমুখের ছবিও ছিল।   

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

অ্যাক্সিডেন্ট

বিকেল তখন বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে। মালঞ্চ নার্সিংহোমের ওটি ডিপার্টমেন্টে ডাঃ রায় গম্ভীরভাবে পেশেন্টের পালস পরীক্ষা করছেন। ফ্যাকাশে সাদা বেডে শুয়ে থাকা পেশেন্টের সারাটা মাথা জুড়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। স্যালাইন চলছে। স্থির হয়ে আছে তার দেহটা। নার্স দুজন একদৃষ্টে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে। পালস দেখা শেষ হলে হাতটা আস্তে করে নামিয়ে রাখলেন ডক্টর। তারপর একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওটি থেকে বেরোতেই এক ভদ্রমহিলা উদগ্রীব হয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে এল। অবস্থা কেমন, ডাক্তারবাবু? প্রশ্নটা যেন ভদ্রমহিলার ভেতর থেকে আপনিই বেরিয়ে এল। ডাক্তার মাথাটাকে সামান্য নাড়িয়ে বললেন, তেমন পজিটিভ নয়। আর আধঘণ্টা ওয়েট করছি। আশা করি, তার মধ্যে সেন্স ফিরবে। লেটস সি, নাউ। চশমাটা বাঁ হাত দিয়ে ঠিক করে দ্রুত পায়ে ডাক্তারবাবু চলে গেলেন অন্যদিকে। পাশ থেকে এক ভদ্রলোক সেই ভদ্রমহিলার কাঁধে হাত রাখতেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে ছিল স্বপ্ন। মাসির এই কান্না দেখে ওরও চোখ ফেটে জল আসতে লাগল। আর সবথেকে বেশি রাগ হতে লাগল তার নিজের ওপর। আসলে এই সবকিছুর মূলে যে সেই, একথা তো আর অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সেদিন ওর কি মনে হয়েছিল কে জানে? ঠিক করল, মাসতুতো বোন লিপিকে সে স্কুটি চালানো শেখাবে। খেয়ালটাও যে এমনিতে আসে নি। আসলে ওর বাবা সদ্য স্কুটি কিনেছে। নিজের কাজে অনেক সময় বাইরে-টাইরে যেতে হয়, এই ভেবেই কেনা। কিন্তু সেটা যে এভাবে স্বপ্ন দখল করে নেবে, তা কে বুঝেছে। দুদিন শুধু লেগেছে তার শিখতে। তারপর দোকানে যাওয়া, বন্ধুর বাড়ি যাওয়া, বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করা, এমনকি কদিন আগে ওটা নিয়ে পড়তে যাবে বলেও ঠিক করেছিল। কিন্তু মায়েরপইপই করে মানাআর বাবার চোখ রাঙানিতে শেষমেশ তাকে ক্ষান্ত হতে হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তার হল না। কাউকে না শেখালেই তার নয়। কাকে শেখান যায়, কাকে শেখান যায় ভাবছে। এমন সময় মওকা নিজেই এসে হাজির। কদিনের ছুটি নিয়ে দুদিন আগে মেসোরা এসেছিল। ব্যস! তাকে আর পায় কে? মাসতুতো বোন ছিল লিপি। ওকেই ধরল। বয়সের দিক থেকে ওরা প্রায় পিঠোপিঠি। মাত্র তিন বছরের ফারাক। তাই প্রথম ছাত্রী তার একরকম ঠিকই হয়ে গেল। কিন্তু লিপির বয়স যে পনের সে খেয়াল তার নেই। ওকে চুপি চুপি সেদিনই দুপুরে বলে, অ্যাই বুনু, স্কুটি চালাবি? আয় তোকে শিখিয়ে দিই। দুপুরের ঘুম সেরে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে লাফিয়ে ওঠে বুনু। এদিকে বুনু ভাল করে সাইকেলটাও চালাতে পারে না। ডেসপারেট মেয়ে! বিকেল হতে না হতেই বেরিয়ে পড়ল দুজনে। মা আর মাসি তখন দোতলায় ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে ব্যস্ত। হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। আর এদিকে বাবা আর মেশো দুজনেই বেশ নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। যাক নির্বিঘ্নেই হবে শেখানোটা। স্বপ্নের মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। গাড়ি চালাতে শিখে যদি কাউকে নাই শেখান গেল, তাহলে কি আর কোন লাভ আছে? আর স্কুটি চালান একেবারেই সোজা। আলাদা করে স্টার্ট দেওয়ার কোন ঝামেলা নেই, গিয়ার-ফিয়ার চেঞ্জেরও কোন পাপ-বালাই নেই। সব দেখেশুনে বুনু বলে, বাঃ, তো খুব সোজা! কোন চিন্তাই নেই। যা হোক করে উঠে বসল বুনু। গাড়িতে স্টার্ট দিয়েই রেখেছিল স্বপ্ন। বলেছিল, পরের বার থেকে তুই- স্টার্ট দিয়ে চালাবি, বুঝলি? মাথা নেড়েই বুনু আক্সিলেটরে দিল জোর চাপ। আসলে জানতোও না চাপ দেওয়ার কায়দাটা। আর স্বপ্নও সেকথা ওকে বলতে ভুলে গেছে। ব্যস। গাড়ি গিয়ে ল্যাম্পপোস্টে মারল এক ধাক্কা। লিপি ছিটকে পড়ল রাস্তায়। মাথা ফেটে চৌচির। চারিদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। মাথাটা ধরে রাস্তায় ছটফট করতে থাকে সে। পড়িমরি করে ছুটে এল স্বপ্ন। রাস্তার লোকজন সব ছুটে এসেছে। চীৎকার-চেঁচামেচিতে বাবা আর মেশোর ঘুম গেল ভেঙে। আর মা-মাসি দুজনেই তখন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে নিচে
ভাগ্যিস কাছেই মালঞ্চ নার্সিংহোমটা ছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে ভর্তি করান হল। কিন্তু ততক্ষণে ওর সেন্স হারিয়ে গেছে। ব্লিডিং হয়ে চলেছে ক্রমাগত। ডাক্তারের নির্দেশে ব্যান্ডেজ বেঁধে আগে ব্লিডিং বন্ধ করা হল। তারপর হল সিটি স্ক্যান। কিন্তু স্ক্যানের রিপোর্টে খারাপ কিছু মিলল না। কোন ইন্টারনাল হেমারেজ নেই। তবু মারাত্মক ব্লিডিং এর কারণে ক্ষতির একটা আশংকা ছিলই। বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। কিন্তু লিপির সেন্স ফিরল না। অপেক্ষা করা হল আরও বেশ কয়েক ঘণ্টা। তবুও কোন রেসপন্স নেই। অবশেষে ডাক্তার আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দিলেন। যদি তার মধ্যেও সেন্স না ফেরে তাহলে পেশেন্ট কোমায় চলে যেতে পারে। নার্সকে বললেও ডাক্তারের এই কথাগুলো সেদিন মাসির কানে ঠিকই গিয়েছিল। সারাদিন ধরে তার খাওয়া নেই, ঘুম নেই, তবু ওরা সবাই ভেবেছিল দু-দিনের মধ্যে জ্ঞান ঠিকই ফিরবে। কিন্তু সেই আটচল্লিশ ঘণ্টা শেষ হতে এখন আর মাত্র আধঘণ্টা বাকী। এর মধ্যে দু-একবার হাল্কা রেসপন্স করলেও সেন্স কিন্তু তার ফেরেনি। বুনু জাগবে তো কিছুক্ষণের মধ্যেই? প্রশ্নটা স্বপ্নের ভেতরে ঘুরপাক খেতে লাগল। ভেতরটায় কষ্ট হতে লাগল তার। একটা অপরাধ বোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগল। এই দুদিন সে তো সর্বশক্তি দিয়ে সবাইকে সাহায্য করেছে। দরকার হলেই ওষুধ এনে দিয়েছে, ইঞ্জেকশন এনে দিয়েছে। যার যা প্রয়োজন সমস্ত কিছু সে মনপ্রাণ দিয়ে করেছে। শুধু এটুকুই তার প্রার্থনা ছিল, বুনুকে যেন সে আবার আগের মত ফিরে পায়। আবার যেন তারা আগের মতই খেলা করতে পারে, খুনসুটি করতে পারে। কিন্তু তার সেই প্রার্থনা সফল হল না কেন? সে তো কারুর কোন ক্ষতি চায় নি। ভাবনাগুলো তাকে যেন পুড়িয়ে দিয়ে যেতে লাগল। মা, বাবা, মাসি, মেসো – সবাই থাকতেও নিজেকে বড্ড একা মনে হতে লাগল তার। বারবার মনে হতে থাকে, কেন গাড়ি চালানো শেখাতে গেল সে? বুনুর এতবড় ক্ষতি সে কিভাবে করল? একটু যদি সে ভেবে দেখত, কিংবা যদি গাড়ি চালাবার কথাটা তার মাথায় না আসত, কিংবা যদি... এইভাবে কয়েক সহস্র সম্ভাবনার মিথ্যে কল্পনার ভিড়ে অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগল সে। মাসি কিংবা মেসো – কারুর দিকেই এখন আর তাকানোরও সাহস নেই তার। তার শুধু মনে হতে থাকে, অপরাধ করেছে সে। সে পাপী। আর এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও সে এটাও খেয়াল করেছে যে মাসি আর মেসো দুজনেই তাকে এড়িয়ে চলছে এ ‘কদিন। বুকের মধ্যেটায় একটা কষ্ট জমে আসে তার। সে তো আর বুনুকে কম ভালবাসত না। তার মনের পরতে পরতে ভেসে ওঠে ছোটবেলার সেইসব দিনগুলো। যখন বুনুকে সে পড়াত। অনেক ছোট ওরা তখন। মাসিরা তখন এই নৈহাটিতেই থাকত। সে কিনা তিনবছরের বড় দাদা। তাই বুনুকে সে না তো কে পড়াবে? বুনুকে কড়া গলায় বলত, অনেক খেলা হয়েছে, এবার পড়তে বসবি চল। বেশীরভাগ দিনই বুনু সহজে পড়তে চাইত না। তখন ওর কানটা ধরে মুলে দিত দাদা। আর তাতেই ভ্যাঁ করে চীৎকার জুড়ত বুনু। আবার এমনও অনেক দিন যেত যেদিন দাদা অঙ্ক না পারার জন্য বাবার কাছে বকা খেত। তখন বুনু আড়ালে ফিক করে হেসে উঠত। এভাবেই কখন কেটে গেছিল তাদের ছেলেমানুষিতে ভরা শৈশব। তাদের ভালবাসা, আন্তরিকতা সমস্তটাই একটা নিবিড় বন্ধনে তাদের ঘিরে রেখেছিল। আর তাই হয়ত অনেক বড় হয়েও সেই দাদার কাছেই বুনু পড়তে চাইত। বলত, বড় হলেই বা। তোর কাছে না তো কার কাছে পড়ব? তারপর মাসিরা একদিন চলেও গেল নৈহাটি ছেড়ে। সেটল হল ওরা দূর্গানগরে। চলে যাওয়ার দিনটাতে, মনে আছে, কিছুতেই যেতে চায়নি বুনু। শেষে ও ঘুমিয়ে পড়লে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবু মাসিরা অন্যান্য আত্মীয়দের মত নয় যারা তাদের ভুলেই গেছে। মাসিরা প্রায়ই আসে ওদের বাড়ি। ওরাও যায়। তাই স্বপ্নের সেই দাদাগিরি, সেই শাসন আজও ঘোচেনি। সে তাই এখনও বুনুকে সব কিছু নিজের হাতে শেখাতে চায়। বুনুর সব কিছুর ওপরেই যেন তারই শুধু অধিকার। আর তাই ও স্কুটিটাও বুনুকে নিজের হাতে শেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু নিজের পক্ষে আনা কোন যুক্তিই আজ সে নিজেই মেনে নিতে পারছে না। তার কেবলই মনে হতে থাকে, সে অপরাধ করেছে। একটা মস্ত বড় অপরাধ। এর কোন ক্ষমা নেই। নিজের মনেই কথাগুলো বলে ওঠে স্বপ্ন। কেউ তাকে লক্ষ্য করে না। মা বেঞ্চিতে মাথাটাকে হেলান দিয়ে বসে আর বাবা মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে বসে বসে পা দুটো হাল্কা দোলাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই জবাব পাওয়া যায় আটটার। বুনু কি আর সাড়া দেবে না? না না। সে কি করে হতে পারে? এই তো সেদিন সে কি সুন্দর তাকে বলেছিল, হ্যাঁ, আমায় গাড়ি চালানো তুই –ই শেখাবি, চল। কিন্তু সে কি করে এত নীরব হতে পারে? চোখ ফেটে জল আসতে থাকে স্বপ্নের। ডাঃ রায় সামনে দিয়ে ঢুকলেন ওটি তে। মাসি দুহাতে মুখ চাপা দিয়ে বসে আছে। মেসো মুখটাকে অন্যদিকে ফিরিয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। হয়ত বা নিজের মেয়ের মুখটাকেই কল্পনা করছে। আর যাদের অনুশোচনা আর আক্ষেপ সবথেকে তীব্র। স্বপ্নের সেই মা-বাবার মুখগুলো একেবারে শুকিয়ে এসেছে। একদিকে রয়েছে তাদের নিজের ছেলে। অন্যদিকে তাদের বোনঝি। যে নিজের মেয়ের থেকে কোন অংশে কম নয়। যাকে তারা নিজের ছেলের সাথেই পড়তে দিয়েছে, খেলতে দিয়েছে, মানুষ হতে দিয়েছে। তবু মায়ের মনটা হু-হু করে ওঠে নিজের ছেলের মুখটার দিকে তাকিয়েও। কিছু না বললেও স্বপ্নের ভেতরের কষ্টটা মা ঠিক টের পেয়ে যায় কিভাবে। বেঞ্চিতে বসে মাথাটাকে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে আড়চোখে একবার স্বপ্নকে দেখে নেয় মা।
হঠাৎই চমক ভাঙে ডাঃ রায়কে ওটি থেকে বেরোতে দেখে। মাসি ভয়ার্ত চোখে তাকায় ডাক্তারের দিকে। কিছু জানতে চাওয়ারও সাহস হয় না তার। মেসোই ডাক্তারের দিকে এগিয়ে যায়। যা জানা গেল, অবস্থা বিশেষ কিছুই উন্নতি হয় নি। পেশেন্টকে মেডিকেল কলেজে রেফার করতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে আবার তিনি আরো কিছুক্ষণ ওয়েট করার কথা বললেন। তার কথাগুলো সবথেকে বেশী যার বুকে বাজল সে স্বপ্ন। তার ইচ্ছে এতটুকু মিটল না। তার বুনু কথা বলল না। এর থেকে আর বেশী কষ্টের কি হতে পারে? এবারে তার মধ্যে শুধু নিজেকে দায়ী করা নয়, একটা ভয়ও দানা বাঁধতে লাগল। বুনুর যদি কিছু হয়ে যায়? তখন তার নিজের অবস্থাটা কি হবে? এই ঘটনার কালো দাগটা কি সারাজীবনেও মোছা যাবে? মূহুর্তে সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতটা তার কাছে যেমন অকল্পনীয় তেমনি ভয়াবহ হয়ে উঠল। নার্সিংহোমের পরিবেশটা তার বিশ্রী লাগতে থাকে। যে কোন ভাবে হোক, এই জায়গাটা তাকে ছেড়ে যেতেই হবে। অসহ্য লাগে তার চারিদিক। গা গুলিয়ে ওঠে তার বারবার। সে কোন কিছু আর না ভেবে ছুটে বেরিয়ে এল নার্সিংহোম ছেড়ে। যাওয়ার আগে একবার যেন অস্পষ্টভাবে শুনতে পায় মায়ের গলা, কি রে, কোথায় যাচ্ছিস? কিন্তু সেসবে তার তখন মন নেই। সে তখন শুধু ছুটে চলে যেতে চায়। দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে। সারাটা পৃথিবী তার কাছে অসহ্য ঠেকে। এসবের মধ্যেও তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে বুনুর হাসিমাখা মুখটা। নিজেকে বড্ড ছোট বলে মনে হয় তার। সে তার এই নিষ্পাপ বোনটাকে কি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল? পাপী, সে পাপী। তার ভাবনা ভুল হোক, ঠিক হোক – কিন্তু আজ তার সামনে কেউ নেই যে তার এই ভাবনা থেকে তাকে বের করে আনবে। সে তাই চলতে লাগল একাকী। যেদিকে তার পা দুটো তাকে টেনে নিয়ে যায়। নিজের চলার ইচ্ছা শক্তিটাও যে তার ফুরিয়ে গেছে। সোজা রাস্তা ধরে চলতে চলতে একসময় সে সামনে দেখতে পেল হাইওয়ে। গাড়িগুলো ছুটে চলেছে সোঁ সোঁ করে। তার সারাটা মন তখন ক্লান্ত, অবসন্ন। একবার মনে হল, এই গাড়িগুলোর চাকার তলায় সে নিজেকে শেষ করে দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই মন তাকে একাজে বাধা দিল। কেন জানি হঠাৎ তার মনে হল, এখুনি ফিরে গেলেই সে বুনুকে সুস্থ দেখতে পাবে। সে তার দিকে তাকিয়ে হাসবে। বলবে, কি রে? ভেবেছিলি আমি আর উঠবো না? ধুর বোকা, তাই কি হয়? এই দেখ, আমি কি সুন্দর তোর সাথে কথা বলছি। ভাবনায় হঠাৎ ছেদ পড়ে স্বপ্নের, একটা অটোর ঘরঘর আওয়াজে। অটো থেকে এক অল্পবয়সী ভদ্রমহিলা তার মেয়েকে নিয়ে নামল। স্বপ্নের চোখ পড়ে ঐ বাচ্চা মেয়েটার দিকে। বছর পাঁচ কি ছয়ের ফুটফুটে মেয়ে। তার বুনুকেও এই বয়সে ঠিক এমনই দেখতে ছিল। তারও এমনই দুটো গভীর কালো চোখ, ফর্সা গাল...... হঠাৎ হাইরোডের ওপার থেকে কে একটা ডেকে উঠতেই বাচ্চাটা ‘মামা’ বলে চেঁচিয়ে একছুট দিল রাস্তার ওদিকে। ওর মা তখন অটোর ভাড়া দিতে ব্যস্ত। গাড়িগুলোকে কেয়ারই করল না বাচ্চাটা। আর ঠিক সেই সময়ই একটা টাটা সুমো বিপুল বেগে বাচ্চাটার একেবারে সামনে এসে পড়ল। ওর মা চীৎকার করে ওঠে আতঙ্কে। মূহুর্তে পুরো দৃশ্যটা ঘটে যায় স্বপ্নের সামনে। সে আর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা দিয়ে বাচ্চাটাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় রাস্তার পাশের ঝোপে। তারপরে সে নিজেও উঠতে যায়। কিন্তু তার আর সময় নেই। গাড়ির এক ধাক্কায় অদূরে ছিটকে পড়ে স্বপ্নের দেহটা। একটা পাথরে ধাক্কা লেগে ওর মাথাটা টুকরো টুকরো হয়ে
যায় নিমেষে। 

ঠিক এই সময়েই মালঞ্চ নার্সিংহোমের নার্স হন্তদন্ত হয়ে ডাঃ রায়কে জানায়, ডক্টর, পেশেন্ট রেসপন্স করছে। চমকে ওঠেন ডাঃ রায়, বলছ কি? নার্স হেসে বলে, হ্যাঁ ডক্টর। ও মাকে দেখতে চাইছে। খবরটা পেয়ে ডাঃ রায়ের মন আনন্দে নেচে ওঠে। তখনই তিনি ছুটলেন পেশেন্টের রুমে। তারপর মাসি, মেশো, বাবা, মা সবাইকেই জানানো হয় খবরটা। সবাই নিশ্চিন্ত হয়, লিপি আবার ভাল হয়ে গেছে। আবার তাকে আগের মত সুস্থ দেখবে সবাই। মাসি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। হু-হু করে কেঁদে ওঠে। খুশীতে মেশো আর বাবার চোখেও জল এসে যায়। মাও খুব খুশি হয়। কিন্তু তারপরেই উদ্বিগ্ন স্বরে বলে, ছেলেটাকে খবরটা জানানো দরকার। ও কোথায় গেল?
প্রকাশিত - এপার বাংলা ওপার বাংলা (বই)