পৃষ্ঠাসমূহ

কথাকলি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কথাকলি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

একটি সাম্প্রতিক ইস্যু



ভারতীয় সাহিত্যিকদের পুরস্কার ত্যাগের একটা রেওয়াজ দেখা যাচ্ছে। এটা হয়ত ভাল একটা দিক। কারণ আজ ভারতের পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক বলে মনে হচ্ছে। সারাটা দেশ জুড়ে শাসকদল যেরকম ন্যক্কারজনকভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা সঞ্চারে পরোক্ষে সাহায্য করে যাচ্ছে তাতে দেশে একটা বড়সড় বিস্ফোরণ না হলে বোধহয় তারা থামবে না। ভাবা যায়! ভারতের মত দেশের একটা জাতীয় রাজনৈতিক দল, যারা কিনা শাসনক্ষমতার শীর্ষে, তারা একটা নির্দিষ্ট ধর্মের ধ্বজাধারীদেরই তোল্লা দিয়ে যাচ্ছে। আর হবে নাই বা কেন? ভোট যে বড় বালাই। দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু। তাই হিন্দুতোষণের পালে আরো বেশি করে হাওয়া লাগানো চাই। তাতে হয়ত ভোট বাড়বে শাসকের। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িকতার বীজ যে আগামীদিনে আমাদের মত সাধারণ শাসিতদের অক্ষত রাখতে পারবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? দেশে আগুন জ্বলে উঠলে, মারা যে পড়ব আমরাই।
অন্যদিকে, এই ‘হিন্দু জাগরণ’এর দিনে বলির পাঁঠা হচ্ছেন, যাঁরা প্রশ্ন করতে পারেন, সর্বপ্রথম তাঁরাই। সে তার নাম কালবার্গই হোক, কি গোবিন্দ পানসারে। প্রথম ঘা’টাই পড়ল এমন এক জায়গায় যেটা মানুষের স্বাধীনতার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ – মতপ্রকাশে স্বাধীনতা। যদি শাসকদলই একটা নির্দিষ্ট ভাবাদর্শের বশবর্তী হয়, তাহলে কি করে এ দেশে চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে পারে? আর যদি তা নাই থাকে, তবে ভারতকে আর আমরা গণতন্ত্রই বা বলি কি করে? এ যে সংবিধান বিরোধী কাজ। শাসকদল তো ভারতেরই সরকারকে গঠন করেছে। সরকার গঠন করার আগে তো তারা ঘটা করে শপথও পাঠ করেছে। কিন্তু তারপরও তারা কি করে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত বন্দুকের গুলিতে স্বাধীনমত প্রকাশের মুখে কুলুপ এঁটে দিতে পারে? জানি না বাবা, এ কি ধরনের দ্বিচারিতা!
 দুঃখের হলেও একথা সর্বজনস্বীকৃত যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কিংবা শিবসেনারা শাসকদলের মদতপুষ্ট এবং তাদেরই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাথী। কিন্তু এইসব সাথীদের অত্যাচারে এদেশে এখন তো সুস্থভাবে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এমনই ভয়ঙ্কর এবং বিপজ্জনক এই দল যে তারা তাদের সংগঠনের বন্ধু শাসকদলকেও কোন তোয়াক্কা করে না! তাদের কথা না শোনার ফল কুলকার্নিকে ভুগতে হয়েছে। ভারতের মুখে কালির ছিটে পড়েছে তাতে। পরিস্থিতি যখন এতটাই ভয়ঙ্কর, তখন আমাদের মত সাধারণ মানুষ যে এদের কাছে কতটা অসহায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আর যাই থাক না থাক, ভোটটা আছে – এটাই বাঁচোয়া। কিন্তু যে শিবসেনা তাদের ভাবগত বন্ধু শাসককেও পাত্তা দেয় না, (কুলকার্নিকাণ্ডে যা প্রমাণিত) তাদের নিয়ন্ত্রণে আনাটাই বোধহয় শাসকদলের উচিত কাজ হবে। নইলে এ যে একটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের জন্ম দিতে চলেছে। এটা ভাববার বিষয় বৈ কি! এটা প্রতিবাদ করবার বিষয় বৈ কি! আর তাই তো ঠিক সময়ে সাবধান বাণী শোনাচ্ছেন, সাহিত্যিকরা, কেবলমাত্র এঁদের কাছ থেকেই এই ব্যবহার আশা করা যায়। কারণ আমরা চিন্তা করতে পারি কালকের কথা, কিন্তু এঁরা যে পারেন আগামী বছরের কথা। তাই দেশের এই দুর্দিনে এই লেখক/সাহিত্যিকরাই যদি না এগিয়ে আসেন, আমাদের কালো ভবিষ্যতকে চোখে আঙুল দিয়ে না দেখিয়ে দেন, তাহলে আসবে কারা? এই দৃষ্টিকোণ থেকে এঁদের ব্যবহার কাঙ্খিত। অতএব এঁদের এই কারণে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট না করাই ভাল। আবার, এই পুরস্কার ত্যাগের মধ্য দিয়ে এঁরা শুধু এঁদের প্রতিবাদটুকুই করছেন না, বরং দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন করবার একটা অবকাশ এঁরা সাধারণ মানুষের মনে তৈরি করে দিচ্ছেন। এটাই তো জনগণের প্রকৃত সেবা। লেখককুল আমাদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন। তাঁরা পথ দেখাচ্ছেন আমাদের – কোন পথে আমরা চলতে পারি। কিভাবে আমরা শাসকদলের হিন্দু তোষণ আর ভেদবুদ্ধিতে প্ররোচনার বিরুদ্ধে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। কিভাবে আমরা সমস্ত রকম অপপ্রচার বুজরুকির মুখোশ খুলে দিতে পারি।
সেই পথ হল একটাই – সম্মিলিত প্রতিবাদ।
তবু লেখকদের যেন আরো একটা দায় থেকে যায়। আসলে তাঁরা তো লেখক, সাহিত্যিক – তাই তাঁদের কাছ থেকে আমাদের চাওয়াটাও আরো বেশি। একথা মানি যে, প্রতিবাদ করবার জন্য পুরস্কার ত্যাগ ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তাই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সামনে ছিল নাকিন্তু পরবর্তীদিনে তাঁরা যেন এই ইস্যুটাকে কেন্দ্র করে কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেন। যা ভবিষ্যতে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রাক্কালেই আমাদের সতর্ক করে দিতে পারে। মনে রাখতে সাহায্য করে, আজকের দিনগুলির এই বিষময় জ্বালাকে। তবেই প্রতিবাদ সার্থক হবে। আর আমার মনে হয়, প্রতিবাদের এর চেয়ে শক্তিশালী উপায়, আর এর থেকে কার্যকরী পন্থাও লেখকদের কাছে আর দ্বিতীয়টি নেই। 

প্রশ্নটা সেই থেকেই গেল



ট্রেনে যেতে যেতে শুনছিলাম, পকেটমারের কাহিনী। এক পকেটমার কিভাবে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে আর তারপর তার ভাগ্যে কি পরিমাণ গণধোলাই পড়ে – তারই ইতিহাস। ওরা বলছিল, যেভাবে ট্রেনের লোকগুলো চোরটাকে মেরেছে তাতে আমরাও নাকি মরে যেতাম। মাটিতে ফেলে ওকে প্রায় আধঘণ্টা পিটিয়েছে। শুনছিলাম আর মনে মনে কেবল ভাবছিলাম একটাই কথা, এই পকেটমার, যে হয়ত নিজের একদিনের গরিবি ঘোচাতে দশ বিশ টাকা চুরি করেছিল, তাকে একলা পেয়ে যত সব বীরপুঙ্গবরা কতই না সাহসিকতার পরিচয় দেখাচ্ছে। আর যখন দেশের বড় বড় রাষ্ট্রনায়করা নিজের দেশটাকেই কর্পোরেটের হাতে বিক্রি করে দেয় তখন কোথায় থাকে এদের বীরত্ব? বরং তারা তো আবার সেই নেতাগুলোকেই ভোট দেয়, যারা দেশের সবথেকে বড় সর্বনাশ করে চলেছে। পাড়ায় ছিঁচকে চোর যখন চুরি করে তখন তাদের গায়ে হাত তুলতে তথাকথিত ভদ্দরনোকেদের এতটুকু বাধে না, অথচ মোদি যখন বিহারে ভাষণ দিতে দিতে উদার হস্তে কোটি কোটি টাকা বিলি করবার (যেন ওর বাপের টাকা!) তথাকথিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়, তখন সেই সাধু লোকগুলোই কিন্তু তাকে ভোট দিয়ে জেতায়। প্রচারের ফলে নেতামন্ত্রীরা আজ গদিতে, আর চোর বেচারি শুধু ‘চোর’ হওয়ার কারণে, আমাদের ভদ্রজনোচিত ধারণার আয়ত্তের বাইরে যাওয়ার কারণে, দরিদ্র আর তার ফলে অসহায় হওয়ার কারণে মাটিতে পড়ে মার খায়। পরে জেনেছিলাম, ঐ চোরটার কাছে কিন্তু কোন চৌর্য দ্রব্যই পাওয়া যায়নি। এটাই হল আমাদের সভ্যতার মজা!
শুনছি, টিটাগড়ের লোকগুলোই নাকি এইসব অপরাধ প্রবৃত্তির সাথে যুক্ত, আর তাই এই অঞ্চলটাই চোরের জন্ম দেয়। আর দেখুন কি আশ্চর্য, সেই টিটাগড়ে যখন একের পর এক মিল বন্ধ হতে থাকে, তখন কিন্তু কেউ ফিরেও দেখে না। শোরগোল ফেরা তো দূরস্থ। এমনকী খবরের কাগজে এ নিয়ে দু-একটা ছোটখাট প্রতিবেদন বেরোনোর সম্ভাবনাও খুব কম। আবার, মিল বন্ধের জেরে তারা বনধ করলে ভদ্রলোকেদের অসুবিধা হয় – তাই পুলিশ তাদের প্রতিবাদের এই ন্যুনতম পথটুকুও বন্ধ করে দেয়। আরো অবাক হয়ে ভাবি, এইসব ছিঁচকে চোরের গল্প, পকেটমারের গল্প আমি ট্রেনেবাসে অনেক শুনেছি। কিন্তু কোথাও শুনিনি এদের তৈরি হওয়ার গল্প। কোন এক রূপকথায় পড়েছিলাম, এদের নাকি কোন স্কুলে পড়ানো হয়, সেখান থেকেই এরা চুরিবিদ্যা শেখে। হাঃ হাঃ। সে কথা রূপকথার বইতেই বন্দী থাক। কোথায় কোন বিহারে বাস্তবেও বোধহয় পাওয়া গেছিল এমনিই একটা স্কুল।
সংখ্যাগরিষ্ঠ চোরদের তৈরি হওয়ার কথা তা সত্ত্বেও কিন্তু আমাদের অনজরেই থেকে যায়। হয়ত আমরা তা ভেবেও দেখি না। এই তো গতকাল শুনছিলাম নৈহাটির হুকুমচাঁদ জুটমিল বন্ধ হয়ে গেল। দুহাজার কর্মী এতে বেকার হয়ে পড়ল। আপনারা সে খবর পাননি হয়ত। পাওয়ার কথাও নয়। দু-একটা খবরের কাগজে এ খবরটা ঠাঁই পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাও কোণেখাঁজে কোথায় যে লুকিয়ে আছে, তা খুঁজে পাওয়াও অনেক কষ্টের কথা। মাত্র দুহাজার সাধারণ মানুষের জীবন তোতা নিয়ে আর কে ভাবে? দেশে একশো কুড়ি কোটি লোক। তাই ওদের কথা আমাদের মনে না করলেও চলবে। ফ্লিপকার্ট পুজোয় কোটি টাকা লাভ করবে, সে খবর আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন। পড়ারই কথা, ফ্লিপকার্টে, অ্যামাজনে কেনাকাটিও শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই। পুজোতে ছেলেমেয়েকে, আত্মীয়স্বজনকে গিফট দিতে হবে যে!
দুঃখ তো তাদের, পুজোর ঠিক আগে যাদের কপালে এই মারণকোপ জুটল। অনিশ্চয়তা তাদের এখন নিত্যসঙ্গী। আমি ভাবি, তাদেরও তো পরিবার আছে, আত্মীয়স্বজন আছে। তাদের ওরা কি উপহার দেবে? আমি জানি আপনারা আমার কথা শুনে হাসছেন। ভাবছেন, আমি পাগলের মত এইসব কথা লিখছি কেন? কি আসে যায় আমার ওদের নিয়ে? এই এখন এই পুজোর মরসুমে এইসব বাজে না ভেবে পুজোর আনন্দটাকে নিয়েই বাঁচা ভাল নয় কি? ঠিকই বলেছেন, আর সত্যি কথা বলতে কি এইসব নিয়ে ভাবতাম না আমিও এতদিনকিন্তু কি জানেন তো, গতকাল কাগজে খবরটা পড়েই আমি কিরকম চমকে উঠেছিলাম। আসলে আমার একটা বন্ধু ওখানে কাজ করত তোতাই হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল ওর কথা। ও বেচারি ওখানে ঠিকে শ্রমিকের কাজ পেয়েছিল ওর সাথে ক্লাস ইলেভেনে, ট্যুয়েলভে অনেকদিন পড়েছি। তারপর কি করে একদিন যোগাযোগটা হারিয়ে গেছে। অনেক দিন দেখা হয় না ওর সাথে। কথাও হয় না আর। তাই জানি না এখন ও কেমন আছে? কেমন আছে ওর বৌ আর ছেলে? ওরা কি করবে? জুটমিল বন্ধ হয়ে গেল বলে আন্দোলন করবে? নাঃ, তাহলেই তো রাস্তায় জ্যাম হবে, আমাদের যেতে অসুবিধা হবে। তাহলে বনধ? নাঃ, বনধ কালচারও উঠে গেছে। আমাদের এখানে এখন কর্মসংস্কৃতি উন্নত হচ্ছে যেতাহলে আর কি উপায় আছে? এক অভাবে সংসার চালানো ছাড়া? আর এই অভাবের তাড়নায় ও-ও যদি একদিন এই চুরির রাস্তা বেছে নেয়? ধরা যাক, নিতান্তই দায়ে পড়েই নিল? আর সে যদি আমার বাড়িতেই একদিন আসে চুরি করতে? তখন আমি কি করব? কোন পক্ষে যাব? বন্ধু বলে বিলিয়ে দেব আমার সম্পত্তি? নাকি, ভদ্রলোকের মত রাস্তায় বের করে ওকে মাটিতে ফেলে পেটাব? ঠিক বুঝতে পারছি না। একটা সমাধান চাই।   

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

আশঙ্কায় আছি



একটা ভয়াবহ সত্যকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। এ এক বিষম জ্বালা। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যদি কেউ এ লেখা পড়েন। তাহলে যেন আমাকে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় বাৎলে দেন। যে ঘটনাটা থেকে এ সবের সূত্রপাত সেটাই আগেই বলি।
অফিসে যাওয়ার সময় রোজ লালগোলা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার আমার বাঁধা থাকে। দরজার থেকে কিছুটা দূরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানোটা আমার বরাবরের অভ্যাস হয়ে গেছে। আসলে আমি উঠি নৈহাটি থেকে। আর নৈহাটির পর থেকে আমার গন্তব্য স্টেশন শিয়ালদা পর্যন্ত এ ট্রেন কোথাও দাঁড়ায় না। তাই লোকেদের নামাওঠার ভিড়টাও থাকে না। শুধু লোকে এখানে দুটো কাজ করতে আসে। সে দুটো হল এক, বিড়ি খাওয়া আর দুই, বাথরুমে যাওয়াশুক্রবার, মানে গতকাল ট্রেনে চড়েছি। প্রায় শিয়ালদার কাছে পৌছে গেছি তখন। একটা পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের ছেলে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। যদিও ট্রেনে বাসে সিগারেট খাওয়াটা আইনত অপরাধ। কিন্তু আমাদের দেশের নিয়মানু্যায়ী, বেআইনি কাজকে আইন বলে চালিয়ে দেওয়াটা অসম্ভব কিছু না। অহরহ ঘটছে এসব। তাই ছেলেটাকে বলব বলব করেও কিছু বললাম না।
সিগারেট শেষ হলে টান মেরে দরজা দিয়ে বাকিটুকু ফেলে ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসল। আমি চিনি না ওকে। হাসল কেন তাও জানি না। তবু প্রতি হাস্যে আমিও জবাব দিলাম। ছেলেটা বলল, ‘আপনি কি সরকারি জায়গায় আছেন?’ আমি উত্তরে হ্যাঁ বললাম,। ও ফট্‌ করে বলে ফেলল, ‘আচ্ছা, আপনার কাছে অ্যাকাউন্টসের কোন কাজ আছে?’ আমি ‘না’ বলি।  
দেখলাম ছেলেটার চেহারা ভাল। সুন্দর স্বাস্থ্য। দেখতেও মন্দ নয়। কিন্তু এই বয়সের একটা ছেলের চাকরি করবার জন্যে অচেনা একজনকে অনুরোধ করতে লজ্জা করছে না দেখে খুব অবাক হলাম। ঠিক ততটাই হলাম অসন্তুষ্টওকিন্তু সে অসন্তোষ না প্রকাশ করে ওর কথা আমি শুনে যেতে লাগলাম। ও বলে যাচ্ছে, ও কোন এক কোম্পানীর অ্যাকাউন্টসে আছে। কিন্তু সেখানে কাজের খুব চাপ। মাইনেও খুব কম। তাই ও সেকাজে ইস্তফা দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছে।
আমি ওকে বললাম, প্রাইভেট কোম্পানী যে ঝেড়ে নিংড়ে তবে দুপয়সা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি সরকারি চাকরি করতে চান, তাহলে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো দিন। আমার কথা শোনার পর ছেলেটা একটানা বকে যেতে লাগল। ওর চাকরিতে কি কি সমস্যা আছে, কি করলে সে ভাল কাজ পেতে পারে তার জন্যও সে কি ভাবছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ওর কথাগুলো শোনার পর আমার ভুল ভাঙল। ছেলেটা সাধ করে আমার কাছে থেকে চাকরির খোঁজ চাইছে না। সে চূড়ান্ত টেনশনের মধ্যে আছে। আর ওর মধ্যে চলতে থাকা এই উদ্বেগই ওকে আমার মতো একজন অচেনা অজানা লোকের থেকে চাকরির খোঁজ করাতে বাধ্য করছে। পরে আমার মনে হচ্ছিল, ও কিছুটা মানসিকভাবেও অথর্ব হয়ে পড়ছে। একটা সাহারা খুঁজছে ও। ভারি খারাপ লাগল আমার। আজকের এই যুবসমাজ যারা কিনা ভবিষ্যত ভারতবর্ষ তৈরি করবে, তারাই আজ কেমন পঙ্গু হয়ে গেছে। সামাজিক ব্যধি, অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ আজ এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে যে ভবিষ্যত প্রজন্ম আজ মানসিক ব্যধির শিকার। কি করে ভাল হবে আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবী। যে ছেলেটার কথা আমি এতক্ষণ বললাম, মধ্যবিত্ত ঘরে এরকম শিক্ষিত ‘বেকার’ যুবকের সংখ্যা কিন্তু নেহাৎ কম নয়। আমার বন্ধুবান্ধবদের বেশিরভাগকে দেখেই আমি একথা বলছি। আর এও সত্যি যে দেশের পরবর্তী দিনগুলো গড়ে তুলতে এই সকল ছেলেমেয়েদের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেমন হবে সেই দিন? কি করে এই চরম নিষ্পেষণের মধ্যে এরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে? শক্তি পাবে কোথায় এরা? আশঙ্কায় আছি, ভবিষ্যতটা না আরো দীন হয়ে পড়ে। শক্তি জোগাতে হবে এদের। আমার পাঠক, তোমরা সবাই এসো। আজকের যুবসমাজকে শক্তি দাও তোমরা। মহাভারতে পড়েছিলাম, শ্রীকৃষ্ণ বলে গেছেন, এ পৃথিবী যখনই অধর্মের শিকার হবে তখনই যুগে যুগে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। সমস্ত পৃথিবীকে তিনি অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন। আজ হাজারো দূর্যোধনে পৃথিবী ভরে গেছে। কিন্তু তাঁর দেখা মেলে কই? হয়ত এ কথার কথা। তাই তার জন্যে অপেক্ষা করে আমাদের লাভ নেই। আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন উঠে আসবেন। আসুন না এমন কেউ, যিনি সারাটা যুবসমাজকে নেতৃত্ব দেবেন – একে এর গভীর অসুখ থেকে মুক্ত করে সুন্দর এক ভবিষ্যতের জন্ম দিয়ে যাবেন।  

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

বিতর্কিত



আজ বেঁধে গেল তুমুল তর্ক। একপাশে আমি, আর ওপাশে তিনজন। আর শুরু হতে না হতেই তা জমে এক্কেবারে ক্ষীর। তা হোক, কিন্তু তর্কের বিষয়বস্তুটা না জানলে যে লেখাটাই জমবে না। তাই গোড়াটা আগে বলা ভাল।
আজ অফিসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অফিসের স্টেনোগ্রাফার শান্তনুদা আমাকে বলে, আচ্ছা শান্তনু, একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ...ওটা তোমার পুরো মুখস্থ? আমি যথারীতি বলে দিলাম, হ্যাঁ। উনি আসলে পুরো ছড়াটা ভুলে গেছিলেন। তাই আমি বলে যেতেই উনি সেগুলো লিখে নিলেন। কিন্তু নয়ে নবগ্রহতেই হল সমস্যা। আমি বললাম, এখানে হয়ত বলেছে, নয়ে নবগ্রহ। কিন্তু আদতে তা নয়। প্লুটোর গ্রহ তকমা ছেঁটে ফেলার জন্য ও এখন নাম যশ খুইয়ে বামন গ্রহের দলে চলে গেছে। ওকে আর ‘গ্রহ’ সম্মান দেওয়ার দরকার নেই। ফট্‌ করে শশাঙ্কদা বলে উঠল, ‘কিন্তু জ্যোতিষে তা বলে না। সেখানে কিন্তু বলে ওটা গ্রহই’। আমি তো মুখ বেঁকিয়ে বলে ফেললাম, ‘সেখানে তো অনেক কিছুই বলে কিন্তু বিজ্ঞান তো তাকে প্রমাণ করতেই পারেনি’।
-      কিন্তু বিজ্ঞানও কি সব বলতে পেরেছে...
ব্যস, শুরু হয়ে গেল বিতর্ক। দুই স্টেনোগ্রাফার শান্তনুদা আর সোমনাথদা, আর একজন ইন্সপেক্টর শশাঙ্কদা – এইসব রথী-মহারথীদের বিরুদ্ধে আমি একা চুনোপুঁটি এম.টি.এস। কিন্তু ওদের বক্তব্য শুনে যা বুঝলাম তা হল, ওরা বলতে চায়, বিজ্ঞান সবকিছু প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে তো সেগুলো মিথ্যে হয়ে যায়নি। এমনকি বিজ্ঞান যা প্রমাণ করতে পেরেছে তাও যে ঠিক হবেই এমন বলবার জোরও তার নেই। অতএব বিজ্ঞান হঠাও। যার বলার মধ্যে কোন জোরই নেই তাকে আবার মানে কে? কিন্তু একজন জ্যোতিষী তো ধ্রুব সত্য বলে, তার বলার মধ্যে তো কোন সন্দেহ নেই। আবার তেমনি জ্যোতিষবিদ্যা যে মিথ্যে তাও তো বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারেনি। হয়ত এই জ্যোতিষের ক্রিয়াকলাপের বিজ্ঞানসম্মত পন্থা নেই। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে বিজ্ঞান তাকে এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতেই পারেনি। অমুক গ্রহর ছায়া তমুক নক্ষত্রের ওপর পড়লেই যে আমার বিপদ হবে, তা বিজ্ঞান বলে না। কিন্তু দূর ভবিষ্যতেও যে বলবে না তার প্রমাণ কই? তার মানে, জ্যোতিষশাস্ত্রকেও ভ্রান্ত বলা যায় না কখনোই। তাই একে মেনে চলতে অসুবিধা কি?
অপরপক্ষে আমার বক্তব্য ছিল, বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত যা প্রমাণ করতে পেরেছে তাকে সঙ্গে নিয়েই কেবল আমাদের চলতে হবে। যেমন, সূর্য একসময় আমাদের চোখে দেবতা ছিল, কিন্তু বিজ্ঞান যখন তাকে দেখাল সেটা কোন দেবতা নয়, একটা নক্ষত্র মাত্র, তখনই তাকে দেবত্ব থেকে পদত্যাগ করে একেবারে সাদামাটা একটা নক্ষত্র হয়ে যেতে হল, যে নক্ষত্র আমাদের ছায়াপথে অসংখ্য রয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমি যদি ভাবতে থাকি, বিজ্ঞানের এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়। বিজ্ঞানের ভুল একদিন ভাঙবেই। আর যেদিন ভাঙবে সেদিন সূর্য আবার স্বমহিমায় তার দেবতার আসন ফিরে পাবে। তাহলে আমার কাজটা আর যাই হোক, মনুষ্যবুদ্ধিপ্রসূত হল না। কারণ মানুষ আদতে যুক্তিবাদী প্রাণী। আর এই যুক্তি দিয়েই এটা বোঝা যায় যে কবে কি হবে তার অপেক্ষা না করে এখনও পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তাকেই আমাদের মেনে নিতে হবে। কারণ তা বৈ তো বাস্তব সত্যকে বোঝবার মত বিকল্প কোন উপায় আমাদের হাতে নেই।
কিন্তু শশাঙ্কদা সেই কথা বুঝল না। সে তর্ক থামাল না। তখন আমি বাধ্য হয়ে স্টিফেন হকিন্সের শরণাপন্ন হলাম। কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আর ইউনিভার্স ইন অ্যা নাটশেল – দুটো বইই আমার পড়া আছে। আমি বিগ ব্যাং তত্ত্ব প্রয়োগ করে বলতে লাগলাম, কেন মানুষের পক্ষে ভগবানের ধারণাকে বোঝা সম্ভব নয়। কেন জ্যোতিষকে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু যুক্তি প্রয়োগ করতেই শশাঙ্কদা বলে, ‘স্টিফেন হকিং কি করে জানল। বিগ ব্যাং – এর সময় কি সে উপস্থিত ছিল? আর এনট্রপি ধারণাকে খণ্ডন করতে শশাঙ্কদা যা বলল তা তার মুখেই শুনুন – তুই বলছিস তো, মানুষের চিন্তার ফলে মস্তিষ্কের ভিতরে শ্বসনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। আর তার ফলে অণু পরমাণুগুলো সব স্থিতি থেকে গতির অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু সাধুরা যখন একমনে বসে ধ্যান করে তখন কিন্তু তারা সমগ্র বিশ্বটাকে একস্থানে কেন্দ্রীভূত করে’। আমি বললাম, হ্যাঁ সে হয়ত সেভাবে মনঃসংযোগের পরিমাণটা বাড়ায়, আর তাই বাইরের চিন্তাভাবনা তাকে দোলা দেয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় তার এনট্রপি বৃদ্ধি তার ক্ষেত্রে কাজ করছে না। তার কিন্তু সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থাতেও শ্বাসকার্য চলছে, আর তাই শ্বসনও থেমে নেই। তাই শ্বসনের ফলে তাপ তো উৎপন্ন হবেই।
শশাঙ্কদার এবারে যে বলল তা শুধু আমার কাছে অদ্ভুত আর অভিনবই নয়, বরং চূড়ান্ত ভয়াবহ। ওনা কথাটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। উনি বললেন, কিন্তু সাধুরা ধ্যানের সময় তো শ্বাস নেয় না। তাদের সেই সময় শ্বসনও চলে না।
আমি আর কিছু বলিনি। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম এই শশাঙ্কদাই কি করে গর্ব করে তার একজোড়া ডিগ্রী আছে বলে? কি করে বলতে পারে, ‘আমি নাটক করি, গান জানি’। কি লাভ হল তার এইসব শিক্ষা পেয়ে? যে তার চেতনাকে কেবল প্রাচীন বিশ্বাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে বাঁধা দিয়ে রেখেছে, তার ডিগ্রি বাড়িয়ে, শিক্ষিত হওয়ার মধ্যেই বা সার্থকতা কোথায়? এই শিক্ষা এদেরকে যে কেবল টাকা রোজগার করতেই শিখিয়েছে, মানসিক মুক্তি দেয়নি। তাই তারা আজও রাধামাধবের পায়ে কপাল না ঠেকিয়ে ঘর থেকে বেরোয় না, অফিস থেকেও বেরোয় না।
মনে আছে, ছোটবেলায় এক গরমের দিনে আমি রিক্সায় উঠেছিলাম, আমার সাথে মা ছিল। আর গরমটাও সেদিন বেজায় ছিলশুনলাম আমাদের রিক্সাওয়ালাটা চেঁচাচ্ছে, আসলে সূর্যটা আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে অনেকটা নেমে এসেছে তো, সেই কারণেই গরমটা বেড়ে গেছে। মনে পড়ে, আমি আর মা সেদিন তার এই কথা শুনে খুব একচোট হেসেছিলাম। এখন আর লোকটাকে দেখি না। কিন্তু এখন যদি সেই রিক্সাওয়ালাকে আবার দেখতে পাই,  তবে তার কাছে ক্ষমা চাইব। বলব, ঘাট হয়েছে দাদা, আপনাকে নিয়ে আমার হাসা সেদিন উচিত হয়নি। আমি সেদিন না বুঝলেও আজ এটা ভালভাবেই জানি, তথাকথিত শিক্ষিতরাও এমন সব চিন্তা করেন, যা আপনার সেদিনের সেই চিন্তার থেকে কোন অংশেই কম মজাদার নয়।
তবু আরো একটা কথা বলে যেতে চাই। কারণ এই ঘটনাটার উল্লেখ না করলে এই লেখাটা সম্পূর্ণ হবে না। আজকের সেই স্মরণীয় বিতর্কের পর, অনেকক্ষণ কেটে গেছে। সবকিছু শান্ত। আমার কিছু কাজ ছিল অফিসারের ঘরে। সেসব শেষ করে আমি খেয়ে নিয়েছি। এমন সময় সেই স্টেনোগ্রাফার সোমনাথদা আমাকে ডাকল। আমি তার কাছে যেতেই সে বলল, জান শান্তনু, তোমার মত বয়স যখন আমার ছিল। তখন আমিও তোমার মত চিন্তা করতাম। সমস্ত কিছুকে যুক্তি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে মানবারই চেষ্টা করতাম। কিন্তু কি জান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার ভেতরের সেই জোরটা কমে গেছে। এখন কোনকিছু না মেনে চললে, বিশ্বাস না করলে কিছুতেই যেন শান্তি পাই না’সত্যি কথা বলছি, ওনার কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম, উনি যেন নিজের ভুলগুলো ধরতে পেরেছেন। ওনাদের যুক্তির মধ্যে যে গলদ ছিল, তা ওনার চোখে পড়েছে। আর তাই উনি যখন নিজের ছোটবেলাটাকে আমার মধ্যে প্রতিস্থাপন করলেন, তার পাশে আজকের উনি, ওনার চোখেই বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। উনি আত্মসমীক্ষণের মধ্যে এটা বুঝতে পারলেন, যে উনি নিজের দূর্বলতা আর তার জেরে বাঁচবার জন্য একটা ভর্সা খুঁজে পেতেই এত গাঢ়ভাবে বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেছেন। বস্তুত, এই বিশ্বাসই কিন্তু এঁদের সবাকারই নিজেদের অস্ত্বিত্বের একটা দৃঢ় অবলম্বন। তাই একে যেন-তেন-প্রকারেণ রক্ষা করবার জন্যে মরিয়া এরা। তাতে শিক্ষিত-অশিক্ষিত ভেদাভেদ মুছে যায়। পড়ে থাকে কেবল বিশ্বাসকে ধরে রাখবার তাগিদ। তাই এরা তাদের ছোটবেলার দিনগুলোকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। তাদের কাছে সেদিনগুলোই হয় স্বর্ণযুগ, আর আধুনিক যা কিছু সবই খারাপ। কারণ আধুনিককে মেনে নেওয়ার মত মানসিক জোর তো তাদের নেই। আর এখানেই তো তাদের ব্যর্থতা। নতুন যে আসছে, তাই পুরোনোকে তো তার জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।
তবু আমি সোমনাথদাকে ধন্যবাদ দেব। উনি তো তাও প্রকারান্তরে হলেও নিজের ভুলটুকুকে স্বীকার করেছেন, কিন্তু বাকি দুজন তো তাও করেনি। অর্থাৎ যে মানসিক জোরের অভাবের কথা সোমনাথদা বলছিলেন, বাকি দুজনের সেই অভাব তার থেকেও যে বেশি এটুকুই বোঝা গেল। তবে এই বিতর্ক থেকে আর যাই হোক আমি কিন্তু শিখলাম অনেক কিছু। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শশাঙ্কদার সেই ভয়াবহ ডায়লগ। নাঃ এখন আর সেই কথাগুলো দ্বিতীয়বার লিখব না। আমার ভয় তাহলে আরো বেড়ে যাবে। বরং এখন আসি, টাটা।