জানো তো, আমার না
একটা ছোট্ট বুনু আছে। প্রচণ্ড দুষ্টু। কিরকম দুষ্টু শুনবে? দাঁড়াও, তবে ওর একটা
গল্প বলি। আগেই বলে নিই, এটা এখনকার কথা নয়। আজ বুনু দেখতে দেখতে কলেজ জীবন ছুঁয়ে
ফেলেছে। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন সে নিতান্তই ছোট। এই ক্লাস ফাইভ কি সিক্স হবে।
পড়াশুনোয় তখন ও ছিল আমারই মতন অমনোযুগে। কিছুতেই মন দিয়ে পড়া করত না।
তো একদিন সন্ধ্যেতে বাবা ওকে পড়াতে
বসিয়েছে। তাও বসাবি তো বসা একেবারে ইতিহাসের মত সাবজেক্ট। যে সাবজেক্ট দেখলে আগেই
মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়, গায়ে জ্বর আসে, পেট ব্যথা – আরো কত কিছু যে বাচ্চাদের হয়
তার ইয়ত্তা নেই। বুনুরও অবস্থা তথৈবচ। খানিকক্ষণ বাবার ভাষায় ‘গেঁই গেঁই’ করার পর
অধৈর্য্য হয়ে সে বলে উঠল, ‘ও বাবা, পড়া তো কিছুতেই মনে থাকছে না। আমি পরে পড়ব’। অন্য
কেউ হলে এখনই হয়ত ওকে মারধোর শুরু করত। কিন্তু আমার বাবার অসীম ধৈর্য্য। সে
আগেভাগেই কারুর গায়ে হাত তোলে না। প্রথমে বোঝায়, তারপর আবার বোঝায়, তারপর বকে...
ইত্যাদি ইত্যাদি। অবশ্য তাতেও যদি কাজ না দেয় তবে যে বাবা কি করে তা আমার জানা
নেই। কারণ আমি বা বুনু – কেউই এখনও সেই জায়গায় পৌছতে পারিনি। তো যাই হোক, যেটা
বলছিলাম। বুনুর পড়া হচ্ছে না দেখে বাবা নিদান দিল, ‘পড়া না হলে চলবে কি করে মা? শোন,
পড়াটাকে আগে ভালবাসতে শেখো। যে বিষয়টা নিয়ে পড়ছ সেটাকে ভাল লাগাও। ভাল লাগাতে
পারলেই দেখবে কত সহজে সেটা মাথায় ঢুকছে’।
বুনু ভাবল, ‘আরে তাই নাকি! এ তো ভারী
মজা!’ এই বলে সে আবার শুরু করল পড়া। একবার করে বইয়ের একটা লাইন পড়ে, আর একবার করে
বলতে থাকে, ‘বাঃ কি সুন্দর লাগছে’, কিংবা ‘বাঃ খুব ভাল তো!’ কিন্তু এই করে করে বেশ
কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলেও যখন মুখস্থ হল না। বইটা পাশে সরিয়ে ও বলল, ‘ধুর, এ মুখস্থই
হচ্ছে না। আমি পড়ব না এখন’। এই বলে ও ইতিহাস বই রেখে অন্য বই খুলে বসল। বলাই
বাহুল্য, এটাই ছিল ওর আসল প্ল্যান।
তোমরাই বল, এ হেন বুনুকে কি করে ইতিহাস পড়াব?
পুনশ্চ – আজকের দিনে
এইসব ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়লে হয়ত সত্যিই খুব রঙীন লাগে। কিন্তু সেই সময়ে এ
ঘটনাগুলো খুব একটা সুখদায়ক ছিল বলে আমার মনে হয় না।