পৃষ্ঠাসমূহ

কথাকলি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কথাকলি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

একটা আবেদন



রবি-শরতের সময় এখন গিয়েছে। বিষ্ণু-বুদ্ধদেব কিংবা বন্দ্যোপাধ্যায় খনি খোঁড়ার কাজও শেষ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সদ্য প্রয়াত, ভদ্রলোককে নিয়ে আর নাড়াঘাঁটা না করাই ভাল। কিন্তু তিরিশের নিচে? ভাল লেখা কই তিরিশের নিচে? রেনেশাঁ শেষ তো কবেই, আজ তার রেশও প্রায় বিলীয়মান। তবু তাকে ঘিরেই এখনও চর্বিতচর্বণ? কবে ঘুম ভাঙবে বাঙালীর? সাহিত্যে আবার কবে উঠবে হিল্লোল? নাকি প্রযুক্তির রমরমায় মৃত্যুই এর একমাত্র ভবিতব্য?
না, সাহিত্যের আবেদন মানুষের কাছে কোনদিনই ফুরিয়ে যেতে পারে না। হয়ত বা বড়জোর দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হতে পারে। তাই একে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারে মানুষ। কিন্তু তোমরাই বল না বন্ধুরা, ছোটগল্প পড়তে ভাল লাগে না তোমাদের? ভাল লাগে না উপন্যাসের মধ্যে, তার চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে? মনের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা কবিতারা মন ভ'রে বৃষ্টি আনে না? আনে তো?
কিন্তু কেই বা ভাবে বাংলা সাহিত্যের ঘুম ভাঙানোর কথা? নামীদামী পত্রিকা যারা কিনা এতদিন পথ দেখিয়ে এনেছে সাহিত্যকে, নতুন নতুন সাহিত্যিকের জন্ম দিয়ে গেছে একের পর এক, বাণিজ্যিক খাতিরে তারাও যে আজ প্রায় বিক্রীত। সস্তার খবর ছেপে, তাৎক্ষণিক ঝালমুড়ি খবরে আর গপ্পে যে মজে রয়েছে তারাও। নতুন লেখক- লেখিকা, যারা সত্যিই সৃষ্টি করতে চায় নিজের প্রাণ থেকে, তাদের যে সুযোগই নেই। যেটুকু বা তারা স্থান পেতে পারত, লবিবাজিতে সেটুকুও নিশ্চিহ্ন। কে দেবে তাদের সুযোগ?
ঘাবড়াবার দরকার নেই বন্ধু। একটা পত্রিকা আছে। যদিও সেই পত্রিকাটার মাত্র দুটো সংখ্যা আমি দেখেছি (কারণ এর কেবল দুটো সংখ্যাই বেরিয়েছে)। শ্রাবণ মাসে এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পাদিত এই পত্রিকাটার নাম 'কালি ও কলম'। সবে দুমাসে পা দিয়েছে। অর্থাৎ হাঁটা তো দূরস্থ, এখনও বসতেও শেখেনি এ। তাই বড় হয়ে রবীন্দ্রনাথ হবে কি লাদেন হবে তা বলাটা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি উচিতও নয়। কিন্তু যেটা আমার খুব প্রশংসনীয় লেগেছে - সেটা হল এই পত্রিকাটার সদিচ্ছাটা। সম্পাদকমণ্ডলীতে যারা রয়েছেন তাঁরা হলেন গণেশ হালুই ও বাণী বসু। আশা করি নতুন করে এদের পরিচয় দেবার দরকার নেই। আর কেবল এদের নাম দেখেই পত্রিকার প্রতি আমাদের আশাও বেড়ে যায়। সুখের কথা, জন্মাবস্থা থেকেই কিন্তু কালি ও কলম বেশ শক্তিশালী বলেই মনে হচ্ছে। শুধু গল্প কবিতাই নয়, এর প্রবন্ধ/আলোচনাগুলো পড়ে দেখবে, তাহলেই বুঝতে পারবে। এপার বাংলা- ওপার বাংলা - এই দুই পারের বাঙালিকে নিয়েই পত্রিকার পথ চলা শুরু। তাই এর প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আরো একটা ব্যপার আমার ভাল লাগল - এই পত্রিকাটা কিন্তু শুধু প্রতিষ্ঠিতদের নয়, নতুনদের লেখাকেও এরা স্বাগত জানায়। আমাদের নৈহাটির কিছু দোকানে এই পত্রিকাটার খোঁজ করেছিলাম, পাইনি। আরো খারাপ লাগল যেখন দেখলাম সেইসব দোকানেই ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো দেদার বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমার একার পক্ষে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কি সম্ভব? কখনোই নয়। কিন্তু আমার সাথে এই তোমাদের মত বন্ধুরা এলে তো আমাদের সংখ্যাটা অনেক হয়ে যাচ্ছে, তাই না? এসো না, তাহলে আমরা সবাই মিলে এ হেন একটা শুভ উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়াই। এতে আমার ব্যক্তিগত কোন লাভ নেই, হয়ত তোমারও তা নেই। কিন্তু বাংলা ভাষা আর সাহিত্যকে আমরা মরে যেতে দেব না, বিকিয়ে যেতে দেব না একে আর পাঁচটা পণ্যের মত - এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। পত্রিকা তার মান বজায় রাখুক আর আমরা তাকে চলতে সাহায্য করি। কি পাশে থাকবে তো?

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

অথ নারীগাড়ি কথা (মাতৃভূমি স্পেশাল)



ট্রেনকে ঘিরে রণক্ষেত্র। আর তার জেরে কেউ কেউ আহত, এমনকি এখন তো শুনছি একজনকে ট্রেন থেকে ফেলেও দেওয়া হয়েছে। শেষের কথাটার সত্যতা কতখানি জানি না, তবে এহেন ঘটনা দেখে তো আমি স্তম্ভিত। সত্যি কথা বলতে কি এরকম একটা সাধারণ ঘটনাকে ঘিরে এমনিধারা অসভ্যতামি শুরু হবে তা তো আর সভ্যদেশে বসে ভাবা যায় না।
এবার আসি আসল ঘটনায়। ঘটনাটা হয়ত আজকের, কিন্তু এই ঘটনার মূল বীজ মাটিতে ফেলা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। তৎকালীন রেলমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি কিনা এখন পশ্চিমবাংলার ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকারের মা) ফলাও করে রেল বাজেটে ঘোষণা করলেন লেডিস স্পেশাল/মাতৃভূমি লোকাল নামে একধরনের বিচিত্র ট্রেন চালু করা হবে যাতে কোন পুরুষ যাত্রীই প্রবেশাধিকার পাবে না। এতে হবে কি স্ত্রীলোকদের যাদের এতদিন কেবল মাত্র দুটো কামরার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে হত, তারা এখন গোটা ট্রেনটায় বসে বসে মায় শুয়ে শুয়েও দিব্যি যাত্রা করবেন। সত্যি তো, মহিলাদের ট্রেনে করে যেতে কত কষ্ট হয় না! তাই তো এই ব্যবস্থা। সবাই বলে উঠল ধন্য ধন্য! দুহাত তুলে ভোট দিল তারা দেবীরূপা থুড়ি মাতৃরূপা ‘মা-মাটি আর মানুষকে। আর দিদিমণি দুহাত তুলে সকলকে আশীর্বাদ করে বললেন জয়স্তু। বাংলাকে পাঁচ বছরে শ্মশান, মাপ করবেন স্বর্গ বানিয়ে ছাড়ব।
এখন তো হল মেয়েদের জয়জয়কার। বেড়ালকে, মানে এই মাতৃভূমিকে এই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সযত্নে লালন পালন করে বড় করে তোলা হল। এরপর দাবী করা হল বেড়াল মেরে ফেলা হবে। কি সাঙ্ঘাতিক কথা একবার ভেবে দেখেছেন? মাতৃভূমিতে এবার যে ছেলেদের প্রবেশাধিকার দিয়ে দিলসাধের স্বর্গরাজ্য যে এবার যায় যায়। একে রক্ষা করা তাই যেকোন বীরাঙ্গনার প্রাথমিক ও পবিত্র কর্তব্য বলে মনে হতেই পারে। সত্যিই তো, এত বড় অন্যায় কি করে মেনে নেওয়া সম্ভব? ছেলেদের সাথে কি মেয়েরা যেতে পারে নাকি? চলছে না, চলবে না। একবার উঠুক ছেলেরা, দেখে নেব। মেয়েরাও কি কম নাকি। তারাও যে পুরুষের থেকে কোন অংশে কম নয় তা তারা দেখিয়ে দেবেই। ব্যস, শুরু হল যুদ্ধ।
এই হল মোদ্দা ঘটনা। এখন তো হাড়ে হাড়েই টের পাওয়া গেল পুরুষদের চেয়ে মেয়েরাও কিছু কম নয়। এমনকি নারীর প্রতি সম্মান রাখতে (পড়ুন বাচ্চার বায়না মেটাতে) নারীগাড়ির প্রস্তাবিত পরিবর্তনও স্থগিত হয়ে গেল। রেল কর্তৃপক্ষ ভয়ে সরে গেল নাকি মেকি কান্না থামাতে তাদের চুষিকাঠি দিল তা বোঝা গেল না। তবে যেটা হল তাতে লাই পেল মেয়েরা। মওকা বুঝে এবার তারা দাঁও মারল আরো জোর। আগের দিন হল, শিয়ালদা মেন লাইনে, এবার হল বনগাঁ লাইনে। রানাঘাট লাইনের মেয়েরা তাদের দাবী আদায় করে ছেড়েছে। তাই এবার বনগাঁ লাইনের মেয়েরাই বা ছাড়ে কেন? তারা এবার আরো একদাগ এগিয়ে দাবী করল, নয় বগি মাতৃভূমিতে তাদের বপু আঁটছে না, তাদের দরকার বারো বগি। কিন্তু চুষিকাঠি এবার আর অত সহজে মিলল না। তাদের দাবী শুনে, না তাদের পাত্তা দিল রেল, না দিল পুরুষেরা। রাগে-অভিমানে তপ্তা নারী শুরু করে দিল দফায় দফায় অবরোধ। পুরুষেরা বলল, তুই খালি একা অবরোধ করতে পারিস নাকি, দেখ কেমন আমরাও পারি। ব্যস, আবার অবরোধ। দুই পক্ষে খণ্ডযুদ্ধ। হায় হায় হায়, এ কি দেশে আমরা বাস করি।
আমি বলি, যারা এই অবরোধগুলো করছেন তারা একবার হাওড়া লাইনকে দেখে শিখুন। সেখানে হয়ত কিছু কম যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু সেখানেও মাতৃভূমি লোকাল আছে। তাতে নির্দিষ্ট কামরায় পুরুষ যাত্রীরা উঠতেই পারে। কিন্তু নারীগাড়ি রক্ষা করার জন্য সেখানকার যাত্রীদের এমন অসভ্যতা করতে দেখা যায়নি। আরে বাবা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই তো যাত্রী, আর যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজনীয়তাটাও তাই সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই যুক্তিতে হয়ত ভোটপাখি ধরা পড়বে না। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই আর দিকদারী এখানেই যে যার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়, তারা কিছুতেই যুক্তিকে আমল দেয় না। তারা শুধু গায়ের জোর ফলায়। এতে কোনদিন ভাল হতে পারে না। সাধারণ নিত্য যাত্রীদের (যারা সংখ্যায় অনেক বেশি) হয়রানির শিকার হতে হয় মাত্র কয়েকজনের দুর্বিষহ স্বার্থপর দাবীতে। তাই লেডিস স্পেশাল নিয়ে এই বাঁদরামির প্রতি চূড়ান্ত ধিক্কার জানাই। এই ট্রেন নিয়ে মেয়েরা যতই চেঁচাক না কেন। একটা লেডিস স্পেশালের জন্য যে কত মানুষের সেদিন দূর্ভোগ পোয়াতে হল তা বলে বোঝাবার মত নয়। আর তা কখনোও ক্ষমার্হও নয়। আর এই ধরনের স্বার্থপর শয়তানীকে প্রশ্রয় দিয়ে রেলকর্তারা পূর্বোক্ত বেড়ালকে আরো বড় হতে দিলেন। মন্ত্রীকে এতে হয়ত খুশি করা গেল। কিন্তু এর ফল আবার যে ভবিষ্যতে মিলবে না তাই বা কে বলতে পারে?

শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

অভিজিত রায় মারা গেলেন কেন?

বাক স্বাধীনতা হরণ করাটা ধর্মের ধ্বজাধারীদের যুগযুগান্তরের নেশা বলতে পারেন। যদি আপনার মনে বিশ্বাস থেকেই থাকে তবে অন্যকে আঘাত করার কি কোন প্রয়োজন পড়ে? মনে তো হয় না। আসলে এ সমস্যাটা রয়েছে অন্য জায়গায়। বস্তুত, এই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা (তা যে ধর্মেরই হোক না কেন) নিজেদের প্রভু হিসেবে দেখাতে চায়। তারা এটা প্রমাণ করতে চায় এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু সম্ভব তার কোন কিছুই তাদের অজ্ঞাত নয়। কিন্তু বাস্তব তো আর তা নয়। তারা তো অনেক কিছুই ভুলভাল বকে। আর সেটাই তো স্বাভাবিক, কারণ তারাও যে মানুষ। কিন্তু তারা যে মানুষ, তারা নিজেরাই সে কথা মানে না, আর ভাবে তারাই বুঝি গড, ভগবান, আল্লার দূত বা প্রেরিত ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সমস্যা হয় যখন বিজ্ঞান এসে সত্যটাকে দেখিয়ে দেয়। তারা যখন বলতে শুরু করে সূর্য আসলে ঘুরছে না, সে স্থির, বরং পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে তখনই ধর্মবাদীদের যায় মাথা খারাপ হয়ে। তাদের যে এতদিনকার অচলায়তন খুলে গেছে সেটা তারা কি করে মানবে? প্রভুর কথাই যদি আজ মিথ্যে হয়ে যায়, তবে লোকে যে ছি ছি করবে। তখন তাদের ভগবান হওয়াই বা হবে কি করে, আর এতদিনকার বলতে থাকা চলতে থাকা ব্যবস্থাই বা টিকবে কি করে? প্রভুত্ব যে তবে যায় যায়। তা কি আর মেনে নেয় এরা?
না নেয় না। আর সেই কারণেই এই হত্যালীলার দরকার হয়ে পড়ে। খুন কর, গলা কেটে ফেল, ভেঙে ফেল, বন্ধ করে দাও সমস্ত বিরোধী আওয়াজ। রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় বলেছিলেন, 'দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?' আর এ তো সত্যকে সরাসরি আটকানোরই অভিপ্রায়। কিন্তু এতে তো মানুষ খেপে যাবে। তারা যে বলবে যাদের এতদিন প্রভু বলে জেনেছিলাম, মহান বলে যাদের কথা মেনে চলতাম তারা কি করে অস্ত্র শস্ত্র বের করছে? তাহলে তারা কি ভণ্ড? তখন ধর্মের গোঁড়ামি কি করে রক্ষা হবে? একটা উপায় আছে। প্রচার কর এই বলে, তুমি ইসলাম, তাই তুমি মহান/ তুমি হিন্দু তাই তুমি মহান/ তুমি খ্রীষ্টান, তাই তুমি মহান। আর এই মহান ধর্মকে আজ আঘাত করা হচ্ছে। কে করছে, কিছু বিজ্ঞানবাদী, মিথ্যেবাদীর দল। তাই তোমার ধর্মকে রক্ষা করার জন্যই ওকে মারা হল। কত বড় মহান কাজ করা হল বল তো? এই না হলে ধর্মীয় উগ্রতা! আমিও তো আমার ধর্মকে ভালবাসি, কিন্তু কোন বিরোধীস্বরকে বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন তো হয়নি আমার। কারুর মতানৈক্য হলে তর্ক করুন। কিন্তু আবার দেখুন যেন তার সাথে বন্ধুত্বও থাকে অটুট। কিন্তু এমনটা ভাবলে তো এত কাণ্ড হতই না। উগ্র ধর্মীয় ধ্বজাধারীদের মূল উদ্দেশ্য যত না ধর্মকে রক্ষা করা তার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ মানুষের আবেগ কেড়ে তাদের ওপর প্রভুত্ব ফলিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করা। আর এই থেকেই তো যত বাবা-মোল্লার উৎপত্তি। প্রকৃতপক্ষে ধর্মটা ব্যক্তিগত ব্যাপার, বিশ্বাসের ব্যাপার। তার প্রতি আস্থা রেখেও বিজ্ঞানচর্চা করা যায়। কিন্তু এই খুন যারা করে, তারা অন্য কাউকেই মানতে চায় না। কারণ তাদের অস্তিত্বরক্ষার তাগিদটা রয়েছে যে সেখানে। এদের রূপ যুগযুগান্তর ধরে একই। অপরদিকে, সত্যকে যারা প্রকাশ করতে চায়, তারা কিন্তু নিজেদের বদলে ফেলে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে তারা এগিয়ে চলে, মানিয়ে নেয় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে। জিত কিন্তু হয় তাদেরই। দেখুন, অতীতে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বাইবেলের অভ্রান্ততাকে অস্বীকার করার জন্য। আজ মানুষ জানে, বাইবেল অভ্রান্ত নয়। ব্রুনোকে মারা গেছিলেন, কিন্তু সত্য মারা যায় নি। সেখান থেকে হাল আমলে নরেন্দ্র দাভালকারকেও মারা হল। কেন? না তিনি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে আইনও আনবার চেষ্টা তিনি করেছিলেন। তাই তাঁকে মারা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আদর্শের কি মৃত্যু ঘটেছে? মুক্তমনা চেতনাকে জাগ্রত করুন। ভেবে দেখুন, কি মানব? কেন মানব? প্রশ্ন করতে শিখুন, তারপর উত্তর খুঁজুন। ধর্ম জানুন, অধর্মও জানুন। কোরান পড়ুন, রামায়ণ-- মহাভারত-গীতা পড়ুন, পড়ুন বাইবেলও। আবার জানুন দ্বান্দ্বিক যুক্তিবাদ। তারপর নিজেই বিচার করতে পারবেন কোনটা ঠিক আর কোনটা নয়। লেখা আর বাড়িয়ে ভারাক্রান্ত করব না (ইতিমধ্যেই যদি না তা করে থাকি)। অভিজিত রায়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সব ধর্মেই অভিজিত রায়েরা তৈরী হয়। তাদের হত্যা করা হয়, আবার জন্মও নেয় তারা। ধর্মের নামে অধর্ম যারা করে তারাই শেষমেষ পরাস্ত হয়। আজ দিকে দিকে যুদ্ধের দামামা বেজেছে। যারা অভিজিত রায়কে হত্যা করল তাদেরই বড়সড় রূপ আইএস, আলকায়দা, তালিবান, লস্কর - ই -তৈবা। বলা বাহুল্য, এরাও টিকবে না বেশিদিন। নতুন যুগ আসছে, নতুন চেতনা তৈরি হচ্ছে যেখানে হত্যা নয়, ধ্বংস নয়, বৈচিত্র্যের মাঝে মিলনই হবে সম্ভব।