গত বৃহস্পতিবার
জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে ভাষণ দিয়েছেন তা হয়ত জম্মু-কাশ্মীরের
মুখ্য শ্রোতাদের কাছে পৌঁছোয়নি, কারণ সেখানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। কিন্তু
তিনি সেখানকার বিশেষ সুবিধা তুলে দেওয়ার এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে
ভাগ করবার ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে জানিয়ে ভাল করেছেন। ঐতিহাসিক
সিদ্ধান্তটি ঘোষণার পূর্ববর্তীকালীন গোপনীয়তা এবং তাঁর সমর্থকদের ঘোষণা-পরবর্তী
উল্লাস বিচার করে এটা বলাই যায় যে তাঁর এই ভাষণ ভরসা যুগিয়েছিল। তাঁর দেওয়া
প্রতিশ্রুতিগুলি যথাযথভাবে রক্ষিত হয় কিনা তা আগামী মাসগুলোতে শুধু জম্মু ও
কাশ্মীরের মানুষের কাছেই নয়, গোটা ভারতের কাছে এবং অন্যান্য দেশের কাছেও স্পষ্ট
হয়ে যাবে। মোদী তাঁর ৩৭-মিনিটের ভিডিওতে বলেছেন জম্মু-কাশ্মীরের জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে
গেলে সেটিকে রাজ্য বলে ঘোষণা করা হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এবং নিয়োগ,
ব্যবসা-বাণিজ্য ও তাদের সাধারণ সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রগুলিকে প্রসারিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী
সেখানকার ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার জন্য, চিত্রপরিচালকদের সেখানে শুটিং করবার আর্জি
জানিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষকে বাইরের গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশতে বলেছেন। এমনকি তিনি জায়গাটিকে
গোটা বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলবার জন্য বিভিন্ন পণ্য এবং পরিষেবার তালিকা
দিতে চেয়েছেন। যদিও এগুলো সবই কাঙ্ক্ষিত, তবুও প্রধানমন্ত্রী যেটা শুধুমাত্র তাঁর
ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে সেটা দিয়েই শুরু করতে পারতেন – অর্থাৎ একটা আগাম নির্বাচন এবং
যত শীঘ্র সম্ভব অঞ্চলটিকে একটি পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান। একদিকে যেমন একটা নির্বাচিত
সরকার নিজেই উন্নয়নের চিহ্নস্বরূপ হবে, অপরদিকে তেমনি সেখানে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে
আসার ক্ষেত্রটিও অনেক সংগঠিত হবে। রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি
প্রাথমিকভাবে একেবারেই অন্যায্য, এটি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়া দরকার।
জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ
এবং সন্ত্রাসবাদ প্রকৃতপক্ষে কোথা থেকে জন্ম নেয় – এটা কি সেখানকার প্রাপ্য বিশেষ
সুবিধা এবং সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত স্বায়ত্তশাসনের জন্যই জন্ম নেয় – সেটা কিন্তু
জটিল প্রশ্ন, কিন্তু বিজেপি সবসময় দাবী করে যে তারা এর উত্তর জানে। প্রধানমন্ত্রী
তাঁর এই অবস্থান সম্বন্ধে বার বার বলেছেন – ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ক ধারা “জম্মু ও
কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদ, স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির” জন্ম দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এইগুলিই ঐ অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক; এখন
সেগুলো উঠে যাওয়ায় উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন যুগ শুরু হল। যদিও দুর্নীতি
এবং স্বজনপোষণ সংক্রান্ত তাঁর অভিযোগ কিয়দাংশে সত্যি, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরকে এদিক
থেকে কোন যুক্তিতেই ভারতের অন্য কোন রাজ্যের থেকে বেশি খারাপ বলা যায় না।
জম্মু-কাশ্মীরকে ভাগ করবার যে প্রবণতা মোদীমশাইয়ের ভাষণে নিহিত আছে, তাতে বোঝা যায়
তিনি সেখানকার বৈষয়িক অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেও ক্ষতিসাধন করতে
ইচ্ছুক – এটি কিন্তু অগ্রগতির গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং
বিশ্বাসের প্রশ্নে ভারতের অন্য কোন সংগঠনই বিজেপির মত এত উচ্চকিত নয়। শান্তি,
স্থিতি ও অগ্রগতি এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সমান উন্নয়নের হার বজায় রাখার জন্য জাতির
একতা জরুরী; কিন্তু এর মানে এই নয় যে জোর করে সাংস্কৃতিক অভিন্নতা আনা হবে।
জম্মু-কাশ্মীরে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার আনা দরকার। সেখানকার শান্তি-শৃঙ্খলা
ফিরিয়ে আনবার জন্য এবং ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য পূর্ণ
রাজ্যের মর্যাদা দান অবশ্য জরুরী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন