পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বন্ধু

সেদিন ঋতু আর তরুণের মধ্যে কি একটা কারণে তুমুল ঝগড়া বেধেছিল। বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার লোকগুলো পর্যন্ত চমকে উঠছিল। বাড়ির পোষা মেনি বেড়ালটা ভয়ে বাগানে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল। অবশ্য স্বামী-স্ত্রীর নতুন এই যুগলবন্দীতে এমন ঝামেলা একটু আধটু হয়েই থাকে। তবে এদের ঝামেলাটা বেশ কদিন ধরেই বেড়ে চলেছে। তারই বোধহয় চরম রূপ নিল আজ। রেগেমেগে বাড়িই ছেড়ে বেরিয়ে এল ঋতু। কিন্তু বেরিয়ে তো এল। এবার যাবে কোথায়? শীতের বিকেল। রোদ্দুর পড়ে এসেছে। বেলাশেষের ম্লান আভাটা সারাটা আকাশে ছড়িয়ে পড়ে বিকেলটাকে জিইয়ে রেখেছে। ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ। এবার শীতটা কিন্তু পড়েছে বেশ জাঁকিয়েই। গায়ের হলুদ চাদরটাকে বেশ করে জড়িয়ে নিয়ে ঋতু কিছুক্ষণ এ রাস্তা ও রাস্তা ঘুরলো। জায়গাটা অত্যন্ত অলিগলি ঘেরা। যে এখানে নতুন এসেছে, তার রাস্তা ঠিকমত রাস্তা চিনে নিতে বেশ অসুবিধেই হবে। ঋতুও এখানে নতুন। ওর বিয়ে হয়েছে মাত্র মাস দুয়েক। তবু রাস্তাগুলো ও মোটামুটি চেনে। সেই চেনা রাস্তা-গলির পথে চলতে চলতে সামনে পড়ল একটা খেলার মাঠ। খুব একটা বড় নয়। মাঠের মাঝখানে একটা ফুটবল খেলা চলছে। দুদিকে পেয়ারা গাছের চারটে ডাল পুঁতে তৈরী হয়েছে গোলপোস্ট। আর মাঠের ধারে কয়েকজন মহিলা কিসব গল্পগুজব করছে। হয়ত বা পিএনপিসি চলছে। সে যাক, একটা বটগাছে ঠেস দিয়ে ঋতু দেখতে লাগলো সামনের ঐ ফুটবল ম্যাচ। কিন্তু মনটা তার পড়ে থাকে সেই বাড়িতেই। কি যে হচ্ছে আজকাল। মনটাকে একদম স্থির করতে পারে না সে। মাঝে মাঝেই খুব রাগ ওঠে তরুণের ওপর। কি করবে কিছু ভেবে পায় না ঋতু। এই সময় কারুর সাথে কথা বলতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু কার সাথেই বা বলবে? কে তাকে বুঝবে? আর তাছাড়া, হাজার হলেও সে তো এখানে নতুন। তাই… হঠাৎ পেছন থেকে তার হাতটা ধরে কে এক হ্যাঁচকা টান মারল। চমকে উঠে পেছনে তাকাতেই দেখে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে। বছর পাঁচ কি ছয়ের হবে। ধবধবে সাদা ফ্রক পড়ে ফোকলা দাঁতে হাসছে। ঋতু তাকে দেখে মৃদু হেসে বলল, কে তুমি? কি নাম তোমার? মেয়েটা বলে, জানিনা। গলাটা বেশ আদো আদো। ঋতু অবাক হয়ে বলে, সে কি! তোমার নামই তুমি জানো না? এ আবার কি? আরো কিছু হয়ত ঋতু ওকে বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটা ওকে বাধা দিয়ে বলে উঠল, তুমি আমার সাথে খেলবে? এহেন প্রশ্নে ঋতু ছেলেমানুষের মত হেসে ওঠে। তারপর বলে, বেশ তো। বল কি খেলবে? মেয়েটা খিলখিলিয়ে হেসে বলে, লুকোচুরি, দেখি তুমি আমায় খুঁজে বের করতে পার কিনা? তারপর একটু থেমে সে আবার বলে, তুমি আমার সাথে খেলবে বলেছ। এই নাও এগুলো তোমায় দিলাম। উপহার। এই বলে সে হাত থেকে একগোছা রজনীগন্ধা ঋতুর দিকে বাড়িয়ে ধরল। ঋতু বেশ অবাক হয়ে ফুলগুলো দেখল। বাঃ, কি সুন্দর! বলে সে একবার প্রাণভরে শুঁকে নিল সেগুলোকে। এ ফুল তুমি কোথায় পেলে? – জিগ্যেস করতে যায় ঋতু। কিন্তু মেয়েটা ততক্ষণে কোথায় লুকিয়ে পড়েছে। ঋতু তাকে খুঁজতে শুরু করে দিল। পাঁচ মিনিট গেল, দশ মিনিট গেল। কোথাও পাওয়া গেল না তাকে। অলি গলি তস্য খোঁজা হয়ে গেল ঋতুর। আবার চারিদিকটা ঘুরে দেখতে গেল সে। এইভাবে প্রায় আধঘণ্টা পার হয়ে গেল। তবুও মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে পারে না ঋতু। কোথায় গেল মেয়েটা? – প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলল ঋতুকে। এইভাবে আরো কত সময় কাটল কে জানে? সন্ধ্যে নামতেই বাড়িতে বাড়িতে শাঁখ বেজে উঠল। রাস্তার স্ট্রীট লাইটগুলো উঠল জ্বলে। তবু মেয়েটার কোন খোঁজ নেই। অবশেষে ঋতু ওকে ডাকতে শুরু করল। কিন্তু ওর নাম তো জানে না। তাই এই যে। তুমি কোথায় গেলে? – এই বলেই ডাকতে হল। রাস্তার লোকেরা ঋতুর দিকে একটু অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছিল। ঋতু তাদের জিগ্যেস করতে লাগলো মেয়েটাকে কেউ দেখেছে কিনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মেয়েটাকে ওরা কেউই দেখেনি। কেউই চিনতেও পারল না ওকে। সবাই এরপর যে যার মত চলে গেল। অগত্যা হিমেল হাওয়ার জোর বাড়ছে দেখে ঋতুও বাড়ির দিকেই হাঁটা লাগাল। মনে রয়ে গেল কিছু প্রশ্ন। কিছু চিন্তা। এভাবে আনমনেই বাড়ি ফিরল সে। বাড়িতে ঢুকতেই তরুণ ব্যঙ্গের সুরে বলতে থাকে, কি হল? খুব তো রেগেমেগে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলে। বলেছিলে আর নাকি ফিরবেই না! এখন কি হল? ঋতু এসবের কোন উত্তর করল না। ধীরে ধীরে সে হাতের মুঠো খুলে বের করল রজনীগন্ধাগুলো। তারপর মৃদু হেসে সে ওগুলো বাড়িয়ে দিল তরুণের দিকে। ওর এই অপ্রত্যাশিত ব্যবহারে তরুণ বেশ হকচকিয়ে গেল। কিন্তু তার খুব ভাল লাগল এটা দেখে যে ঋতু তাকে ভালবাসে, তাই সে তার জন্যে অমন সুন্দর ফুল নিয়ে এসেছে।। আর পারল না সে। একবার ‘সরি’ বলে ঋতুকে সে জড়িয়ে ধরল সে নিজের বুকে।

1 টি মন্তব্য:

কুহক বলেছেন...

নজর বুলিয়ে গেলাম। সময় পেলেই পড়বো।